ঢাকা ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
কবি নজরুলের সমাধি চত্বরে শহীদ হা‌দির দাফন সম্পন্ন শিল্পকলার সব অনুষ্ঠান ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ স্থগিত কুষ্টিয়ায় নির্বাচন অফিসে দুর্বৃত্তদের আগুন হাদির জানাজা ঘিরে ডিএমপির নিরাপত্তা বলয়, থাকছে ১ হাজার বডি ওর্ন ক্যামেরা একের পর এক মিছিল মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশ করলো হাজারো ছাত্র-জনতা শরীফ ওসমান হাদির মরদেহ আজ সন্ধ্যায় পৌঁছেছে: বিমানবন্দরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ৯ প্লাটুন ব্যাটালিয়ান আনসার কনওয়ের ২২৭, নিউজিল্যান্ডকে ছেড়ে না দেওয়ার ইঙ্গিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের টিকটক ভিডিওকে কেন্দ্র করে গৃহবধূকে হত্যা, স্বামী আটক হান্নান মাসউদের ৩ সমর্থককে কুপিয়ে জখম, মামলা দায়ের

চট্টগ্রামে অশুভ সূচনা: গ্যাং লিডার থেকে বিএনপির প্রচারণায়, কে এই বাবলা

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ নভেম্বর, ২০২৫,  1:03 PM

news image

চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে গিয়ে গুলিতে নিহত সারোয়ার হোসেন বাবলা ছিলেন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে চট্টগ্রামে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন তিনি। 

একসময় এইট মার্ডারের আসামি ও সাজ্জাদ হোসেন খানের সহযোগী হিসেবে আলোচনায় আসেন বাবলা। পরবর্তীতে গুরু সাজ্জাদের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে আলাদা দল গঠন করেন তিনি৷ তখন গুরু সাজ্জাদের আরেক সহযোগী ছোট সাজ্জাদ তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

বড় সাজ্জাদের নির্দেশনায় সরোয়ারকে টার্গেট করে একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিবারই প্রাণে বেঁচে গেলে সবশেষ বুধবারের (৫ নভেম্বর) ঘটনায় আর রেহাই পাননি তিনি। একেবারে পিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে করা কয়েক রাউন্ড গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে পড়ে বাবলার শরীর। 

পুলিশের তথ্যমতে, সম্প্রতি বিএনপির নেতাদের হাত ধরে রাজনৈতিক মঞ্চে জায়গা করে নেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের বাবলা। এর আগে সাজ্জাদ হোসেনের হাত ধরে এই বাবলা ও তার আরেক সহযোগী নুরুন্নবী ম্যাক্সন চট্টগ্রামের অপরাধজগতে পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন। অত্যাধুনিক সব অস্ত্র হাতে ত্রাস ছড়ানো ম্যাক্সন ২০১১ সালের জুলাইয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিঙ্গারবিল থেকে গ্রেপ্তার হন। পরবর্তীতে তার তথ্যের ভিত্তিতে বায়েজিদ এলাকা থেকে বাবলাকে আটক করে পুলিশ। 

সে সময় তাদের কাছ থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল, দুটি পিস্তল, একটি এলজি, একে-৪৭ রাইফেলের দুটি ম্যাগাজিন ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার করা হয়। ২০১৭ সালে কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে কাতারে চলে যান দুজনই। সেখান থেকেই দেশে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ ছিল পুলিশের। কাতারে মারামারির ঘটনায় এক মাস সাজা ভোগের পর ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বাবলাকে দেশে ফেরত পাঠায় কাতার পুলিশ।

ঢাকায় পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে তাকে আটক করে পুলিশ। পরদিন চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানার খন্দকীয়া পাড়ায় বাবলার বাসায় অভিযান চালিয়ে ৩০ রাউন্ড গুলিসহ একটি একে-২২ রাইফেল ও একটি এলজি উদ্ধার করা হয়। এরপর প্রায় চার বছর কারাগারে থেকে জামিনে বের হয়ে আবারও আলোচনায় আসেন। গত বছরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়, পরে জামিনে মুক্তি পান।

মুক্তির পর বিএনপি নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন বাবলা। মূলত কারাগারে থাকাকালে চট্টগ্রাম-৪ আসনের বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। মুক্তির পর এই সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। এরপর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।

মাত্র এক মাস আগে বিয়ে করেন বাবলা। তার বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন এরশাদ উল্লাহ ও আবু সুফিয়ানসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা। বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে তাদের পাশে দেখা গেছে বাবলাকে। বুধবার বিকেলে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী পূর্ব মসজিদের কাছে গণসংযোগে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন চট্টগ্রাম- ৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহসহ তিনজন। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে সরোয়ার হোসেন বাবলা পরে হাসপাতালে মারা যান।

ঘটনার বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ টার্গেট ছিলেন না। টার্গেট ছিলেন সরোয়ার বাবলা। তাকে নিশ্চিতভাবে হত্যা করার জন্যই গুলি করা হয়। এটা সরোয়ার বাবলার নিজ এলাকা। বাইরে থেকে আসা সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। সরোয়ারের বিরুদ্ধেও অনেক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

 

সিএমপি কমিশনার আরও বলেন, এ ঘটনা কারা ঘটাতে পারে, তার কিছু প্রাথমিক অনুমান আমাদের আছে। নির্বাচনের আগে এমন ঘটনা আমাদের জন্য অশুভ সূচনা। সব রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করব, প্রচারণা শুরু করার ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে জানাতে হবে, যেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করছেন এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বলেন, এটা বিএনপির বিষয় নয়। প্রার্থীর প্রচারণায় শত শত মানুষ অংশ নিয়েছেন। সরোয়ার সেখানে অংশ নিলেও এটি দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের পূর্ববিরোধের জের।

logo
সম্পাদক ও প্রকাশক : ডাঃ শাহ মোঃ রেজাউল করিম
নির্বাহী সম্পাদকঃ মো. বেলাল শেখ