ঢাকা ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
কবি নজরুলের সমাধি চত্বরে শহীদ হা‌দির দাফন সম্পন্ন শিল্পকলার সব অনুষ্ঠান ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ স্থগিত কুষ্টিয়ায় নির্বাচন অফিসে দুর্বৃত্তদের আগুন হাদির জানাজা ঘিরে ডিএমপির নিরাপত্তা বলয়, থাকছে ১ হাজার বডি ওর্ন ক্যামেরা একের পর এক মিছিল মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশ করলো হাজারো ছাত্র-জনতা শরীফ ওসমান হাদির মরদেহ আজ সন্ধ্যায় পৌঁছেছে: বিমানবন্দরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ৯ প্লাটুন ব্যাটালিয়ান আনসার কনওয়ের ২২৭, নিউজিল্যান্ডকে ছেড়ে না দেওয়ার ইঙ্গিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের টিকটক ভিডিওকে কেন্দ্র করে গৃহবধূকে হত্যা, স্বামী আটক হান্নান মাসউদের ৩ সমর্থককে কুপিয়ে জখম, মামলা দায়ের

সাহিত্যের সংজ্ঞা

#

শেখ বেলাল

১২ ডিসেম্বর, ২০২৫,  7:30 PM

news image


নির্মল কুমার রায়।

সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ,

আখচাষী মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মধুখালী, ফরিদপুর।


ভ‚মিকাঃ কোনো বিষয়কে সংজ্ঞায়িত করলে তার পরিধি নির্দিষ্ট ও সীমাবদ্ধ হয়ে আসে অর্থাৎ শুধু সংজ্ঞার্র্থে এর অর্থ পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ নাও হতে পারে। তাই বিষয়টি পরিস্ফুট করার জন্য সংজ্ঞার পাশাপাশি উদাহরণসহ তথ্য উপস্থাপন ও বিস্তৃত আলোচনার প্রয়োজন পড়ে। এ কথা স্বীকার করে নিয়েই অতি সংক্ষেপে সাহিত্য ও সাহিত্যের বিভিন্ন ধারার সংজ্ঞা উপস্থাপনে এ ক্ষুদ্র চেষ্টা।


সাহিত্য (খরঃবৎধঃঁৎব); (স. সহিত+য)ঃ সাহিত্য অর্থ সহিতের ভাব বা মিলন, ভাব ও ভাষার সুন্দর মেলবন্ধন। সাহিত্য হচ্ছে জ্ঞানগর্ভ বা শিক্ষামূলক গ্রন্থ যার মাধ্যমে এক হৃদয়ের সাথে অপর হৃদয়ের মিলন ঘটে। জীবন ও জগতের কল্যাণকামী সকল চিন্তা-চেতনার শিল্পিত রূপের প্রকাশ ঘটে সাহিত্যে। আবার সাহিত্য লেখকের চেতনা ও কল্পনারাজ্যের গুণগত প্রকাশনা এবং তা সকলকে নির্মল আনন্দ দান করে। শেষে বলা যায় লেখকের জীবনদর্শন ও জীবনানুভূতিতে বাহ্যিকজগত ও অন্তর্জগত সম্বন্ধে যে ধারণার উন্মেষ ঘটে তার শিল্পগুণ সম্মত প্রকাশনাই হচ্ছে সাহিত্য। প্রবন্ধ, ছোটগল্প, নাটক, উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত ইত্যাদি এগুলো সাহিত্যের বিভিন্ন ধারা। বাংলা সাহিত্য বিশ্বে উচ্চ মর্যাদার একটি সাহিত্য ধারা। ইতিহাস, দর্শন, সঙ্গীত, কাব্য, উপন্যাস- সব ক্ষেত্রেই বাংলা সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যে সম্মানজনক স্থান দখল করে আছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নোবেল পুরস্কার’ প্রাপ্তি (১৯১৩ খ্রি:), বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা সাহিত্য কোর্স হিসেবে পড়ানো হয়। বাংলা সাহিত্য বিশ্বের বহু ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এছাড়া সাহিত্যসভা, বইমেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাÐ বিশেষ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত ও বাউল সঙ্গীত বিশ্বদরবারে স্বতন্ত্র মর্যাদা পেয়েছে।


প্রবন্ধ (ঊংংধু); (স. প্র+ বন্ধ্+অ)ঃ প্রবন্ধ, হলো তত্ত¡কেন্দ্রিক সংক্ষিপ্ত গদ্য রচনা। প্রবন্ধ সাহিত্যকে সন্দর্ভ ও নিবন্ধও বলা হয়ে থাকে। একে প্রবন্ধ বা নিবন্ধ বলার কারণ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য যুক্তির বন্ধন। জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন-ইতিহাস, সমাজ-রাজনীতি, সাহিত্য-শিল্পকলা প্রভৃতি ব্যাপার নিয়ে যে সমস্ত তত্ত¡কেন্দ্রিক ও বস্তুগত চিন্তামূলক গদ্যনিবন্ধ রচিত হয় তাকে বলা যেতে পারে প্রবন্ধ সাহিত্য। যুক্তির সাহায্যে লেখক যখন কোন চিন্তাগ্রাহ্য তত্ত¡কথাকে উপস্থাপন, প্রমাণ বা প্রতিবাদ করেন তখন তা প্রবন্ধ হয়ে ওঠে। সুতরাং প্রবন্ধ প্রধানত মানুষের চিন্তা, মনন ও তত্তে¡র সঙ্গে জড়িত। যুক্তি এখানে প্রধান হাতিয়ার। আবেগ ও কল্পনা প্রবন্ধে অনুপস্থিত। সাহিত্যস¤্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৮-৯৪ খি:) বাংলা সাহিত্যে প্রবন্ধের পথ প্রদর্শক, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১ খ্রি:)  ও প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৪৬ খি:) বাংলা প্রবন্ধের শিল্পরূপ দান করেন।


ছোট গল্প (ঝযড়ৎঃ ংঃড়ৎু): ছোটগল্প কথা সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত। মূলত মানব জীবনের খÐ চিত্রের শিল্পসম্মত রূপায়নকে ছোটগল্প বলা যায়। সংহত পরিধিতে বাহুল্যবর্জিতভাবে মানুষের জীবন সম্বন্ধে কোন একটি কেন্দ্রীয় ব্যাপারের উপর আলোক নিক্ষেপ করাই হলো ছোটগল্পের প্রধান লক্ষণ। তাই নাটকীয়তা, গীতিমূর্চ্ছনা, আকস্মিকতা ও ব্যঞ্জনা ছোট গল্পের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রধান। এ প্রসংগে প্রকৃতি থেকে উদাহরণ নেওয়া যাক, গরুর খুরের আঘাতে সৃষ্ট মাটির ছোট গর্তে বৃষ্টির পানি জমলে তাতে সমগ্র আকাশকে দেখা যায় তেমনি ছোটগল্পের ক্ষুদ্র পরিসরে মানব জীবনের সমগ্র চিত্র ফুটে ওঠে যেন বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর প্রকাশ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর "সোনার তরী" কাব্যের ‘বর্ষাযাপন' কবিতায় ছোটগল্পের সার্থক সংজ্ঞা দিয়েছেন।


ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা      ছোট ছোট দুঃখকথা

নিতান্তই সহজসরল;

সহ¯্র বিস্মৃতিরাশি      প্রত্যহ যেতেছে ভাসি;

তারি দু’চারিটি অশ্রæজল।

নাহি বর্ণনার ছটা     ঘটনার ঘনঘটা

নাহি তত্ত¡, নাহি উপদেশ;

অন্তরে অতৃপ্তি রবে    সাঙ্গ করি’ মনে হবে

শেষ হয়ে হইল না শেষ।

বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতেই ছোটগল্প প্রাণ পেয়েছে।


নাটক (উৎধসধ); (স.  নট্+অক)ঃ নাটক মূলত দৃশ্যকাব্য বা অভিনয়যোগ্য সাহিত্যগ্রন্থ। মঞ্চে অভিনয়ের জন্য রচিত সংলাপ নির্ভর সাহিত্য কর্মকে নাটক বলা যায়। উপন্যাস কিংবা কবিতা নিজেও পড়া যায় আবার অপরকেও শোনানো যায়, কিন্তু নাটক যৌথ শিল্প বলে অভিনয় না হলে এর সার্থকতা প্রকাশ পায় না। সুতরাং নাটক তৈরীতে প্রয়োজন- নাট্যকার, অভিনেতা-অভিনেত্রী, মঞ্চ, মঞ্চকর্মী এবং দর্শক-শ্রোতা তবেই নাটকের সার্থকতা। এ ছাড়া প্লট নির্মাণ, চরিত্রায়ন, চরিত্রানুযায়ী' সংলাপ, মানসম্মত কাহিনী ইত্যাদি এগুলো নাটক তৈরীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিশেষে বলা যায়, মানব জীবনের গতিমান প্রতিচ্ছবির শিল্পধন্য কাব্য-রস-ঘন মঞ্চায়নই নাটক। নাটক বিভিন্ন শ্রেণির হয়ে থাকে যেমন:  সামাজিক, ঐতিহাসিক, পৌরাণিক ও কাব্যিক। বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে নাটক প্রধানত ট্র্যাজেডি, কমেডি এবং ট্র্যাজি- কমেডি এ তিন ধরণের হয়ে থাকে। তবে ট্র্যাজেডি নাট্য সাহিত্যের এক উল্লেখযোগ্য ধারা। ট্র্যাজেডি দু'ধরণের এক. গ্রীক ট্র্যাজেডি (ঘটনা দৈব নির্ভর) দুই. শেক্সপিরিয়ান ট্র্যাজেডি (মানুষই নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা)। গ্রীক নাট্যকার সোফোক্লিস (খ্রি:পূর্ব- ৪৯৭-৪০৬ অব্দ) রচিত ‘ইডিপাস’ নাটক গ্রীক ট্র্যাজেডির অন্যতম উদাহরণ। ইংল্যান্ডের জাতীয় কবি এবং ইংরেজী সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক শেক্সপিয়ার (১৫৬৪-১৬১৬ খ্রি:) রচিত ‘ওথেলো’ ‘হেমলেট’ ‘ম্যাগবেথ’ অন্যতম ট্রাজেডি নাটক। তারাচরণ সিকদার (১৮১২-১৮৭৪ খ্রি:) রচিত ‘ভর্দ্রার্জুন’ (১৮৫২) বাংলা সাহিত্যের প্রথম নাটক।


উপন্যাস (ঘড়াবষ); (স. উপ+নি+ অস্+অ)ঃ উপন্যাস মানুষের জীবনের বড় গল্প যার অবলম্বন দ্ব›দ্বাশ্রয়ী নর-নারী যারা বাস্তবের সাথে সম্পর্কিত। মূলত মানব জীবনের বাস্তবনির্ভর অখÐ কাহিনী কেন্দ্রিক গদ্যরূপের শিল্প সম্মত প্রকাশনাই হলো উপন্যাস। খ্যাতিমান সাহিত্যিক শ্রীশচন্দ্র দাস উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন-"গ্রন্থকারের ব্যক্তিগত জীবনদর্শন ও জীবনানুভূতি কোন বাস্তব কাহিনীকে অবলম্বন করিয়া যে বর্ণনাত্মক শিল্প কর্মে রূপায়িত হয়, তাহাকে  উপন্যাস কহে।" সুতরাং সার্থক উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অখÐকাহিনী, কাহিনীর বাস্তবতা, চরিত্রায়ন, গদ্যময়তা, ভাবের গভীরতা ও লেখকের মনস্তাত্তি¡ক বিশ্লেষণ। উপন্যাস সামাজিক, ঐতিহাসিক, কাব্যধর্মী, রহস্যমূলক প্রভৃতি শ্রেণির হয়ে থাকে।  প্যারীচাঁদ মিত্রের (ছদ্মনাম টেকচাঁদ ঠাকুর); (১৮১৪-১৮৮৩ খ্রি:) "আলালের ঘরের দুলাল"(১৮৫৮) বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস এবং সাহিত্য স¤্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-৯৪ খ্রি:) রচিত ‘দুর্গেশনন্দিনী’ (১৮৬৫) বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস।


কবিতা (চড়বস): (স. কবি+তা)ঃ কবিতা হচ্ছে কবি মনের গীতিময় ভাবের প্রকাশনা। অন্তর্জগত ও বাহ্যিকজগত সম্বন্ধে কবির কল্পনাতে যে ভাবের উদয় হয় তার স্বত:স্ফুর্ত, শিল্পগুণ সমন্বিত, ছন্দোবদ্ধ প্রকাশনাই হচ্ছে কবিতা। কাব্য (স. কবি+য) হলো কবিতার গ্রন্থ। মহাকাব্য (ঊঢ়রপ); (স. মহা+কাব্য)ঃ মহাকাব্য হলো দেবতা বা দেবতুল্য নায়কের জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে অষ্টাধিক সর্গে রচিত বীররস প্রধান আখ্যান কাব্য। মাইকেল মধুসূদন দত্তের (১৮২৪-১৮৭৩ খ্রি:) ‘মেঘনাদবধ’ (১৮৬১) কাব্য বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ট মহাকাব্য। পদ্য (চড়বঃৎু); (স.  পদ্+য) হচ্ছে ছন্দোবদ্ধ রচনা। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ (৯৫০-১২০০ খ্রি:) এবং মধ্যযুগের (১২০১-১৮০০ খ্রি:) সকল রচনাই ছন্দোবদ্ধ। লুইপা বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম কবি। তিনি বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন “চর্যাপদের” আদিকবি। গদ্য (চৎড়ংব); (স.  গদ্+য) হচ্ছে ছন্দোবদ্ধ নয় এমন কথোপকথনের ভাষা। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা গদ্যের জাগরণ শুরু হয়। তখন ঈশ্বরচন্দ্র (বিদ্যাসাগর) বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮২০-১৮৯১ খ্রি:) বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে অনেক অবদান রাখেন। 


কৃতজ্ঞতার সাথে সংগ্রহ উৎস স্মরণঃ 

১. “বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত” অসিত কুমার বন্দ্যোপধ্যায়- এম.এ., পি-এইচ.ডি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। 

২. “বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান” প্রধান সম্পাদকঃ ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক; 

                                                      সম্পাদকঃ শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, সহযোগী সম্পাদকঃ স্বরোচিষ সরকার। 

৩. শব্দ সংকেত: স.=তৎসম শব্দ।

logo
সম্পাদক ও প্রকাশক : ডাঃ শাহ মোঃ রেজাউল করিম
নির্বাহী সম্পাদকঃ মো. বেলাল শেখ