বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলায় ভেকু দালাল ও ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্যে অধিকাংশ ইউনিয়নগুলোতে হাজার হাজার বিঘার উচ্চ ফলনশীল জমিতে চলছে মাটি কাটার হিরিক। গত দু বছর যাবত বন্ধ হয়ে গেছে চাষীদের ধান চাষ। চাষীরা ইরি ব্লক করতে না পারায় হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছে অসহায় চাষীরা। কৃষকরা পুকুর খনন বন্ধের দাবীতে বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ দিয়েও রক্ষা করতে পারছেন না তাদের আবাদি তিন ফসলি জমি। বেপরোয়া ভেকু দালালরা মানছেনা কোন সরকারি বিধি নিষেধ, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে এবং কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে একাধিক খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) বা ভ্যাকু মেশিন, ও ডাম্প ট্রাক দিয়ে শত শত বিঘা ফসলি জমির মাটি কেটে তৈরি করছে পুকুর। পুকুর খনন করতে জমি লিজ না দিতে চাইলে জমির মালিকদেরকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভিতি প্রদান করে জোর করে জমি লিজ নেওয়া মত গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ভেকু দালালদের বিরুদ্ধে । এছাড়াও জমি দিতে না চাইলেও জোর করে রাতারাতি কেটে ফেলা হচ্ছে তাদের জমি। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত দুই বছর যাবত গৌরনদী উপজেলার বাটাজোড়, সড়িকল, মাহিলারা, নলচিড়া ইউনিয়ন সহ অন্যান্য ইউনিয়নের ফসলি জমিতে পানের বরজ ও মাছ চাষের নামে চলছে ভেকু দালালদের অবৈধ পুকুর খননের প্রতিযোগিতা। বর্তমানেও চন্দ্রহার, আধুনা ও বাহাদুরপুরে প্রায় দুই ডজন পুকুর খননের কাজ চলছে। এছাড়া আগৈলঝাড়া উপজেলারও অধিকাংশ বিল জুরে ফসলি জমি নষ্ট করে ভেকু দালালদের বিরুদ্ধে পুকুর খনন করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় গরীব চাষীদের ভাষ্যমতে, এক সাবেক চেয়ারম্যান এর ভাই ও সাবেক সর্বহারা নেতাদের ছত্রছায়ায় ভেকু দালালেরা বর্তমানে বাটাজোড় ইউনিয়নের চন্দ্রহার, পূর্ব চন্দ্রহার, আধুনা, বসার, বংকুরা, নোয়াপাড়া, বাহাদুরপুর, সিংগা, সড়িকল ইউনিয়নের সাহাজিরা সহ বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমির মালিকদের ধান চাষের বদলে পানের বরজ ও মাছ চাষে অধিক লাভবান হওয়ার মিথ্যা ফুলঝুরি দিয়ে মাটি কেটে পুকুর খনন করছে। কেউ কেউ ইটের বাটা সহ অন্যান্য স্থানে মাটি বিক্রিও করছেন। ফলে দু বছর যাবত বন্ধ রয়েছে সকল প্রকারের ধান চাষ। আরো অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী নেতা ও উপজেলা প্রশাসনের দপ্তরের কিছু কতিপয় ব্যাক্তিদের ম্যানেজ করে গৌরনদী আগৈলঝাড়ার একটি ভেকু দালাল ও ভূমিদস্যুদের সিন্ডিকেট চিটাগং, খুলনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে চুক্তি ভিত্তিক এক্সোভেটর ভেকু গাড়ী নিয়ে আসে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় উপজেলা প্রশাসন, থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরকে কৃষকদের সুবিধা দেয়ার নামে মৌখিক অনুমতিতে দালাল চক্র তাদের এই অবৈধ কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। গৌরনদী উপজেলায় অন্তত শতাধিক দালাল চক্র এই ফসলি জমি নষ্ট করার কাজ করছে। উপজেলার বাসিদের মধ্যে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কেন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ভেকু ও ভূমিদস্যু দালাল চক্র এই পুকুর খনন কাজ করছে? কেউ কেউ বলছেন, ফসলি জমিতে চাষীরা মৌসুমি ইরি চাষ কিংবা তিন মৌসুমি ফসল চাষ করতে না পারলেই জমি অনাবাদি থাকবে। আর এই সুযোগটাই নেবে ভূমিদস্যু দালাল চক্র। অধিকাংশ পুকুর খননের মাটি স্থানীয় ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে সরবারহ করা হচ্ছে। আর ওই সরবাহকৃত ট্রাক্টার গাড়ীতে করে মাটি বহনের ফলে সরকারের কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণকৃত গ্রামীন পাকা কাচা পাকা রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে বড় বড় খানা খন্দ আর অন্যদিকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে কতিপয় ভেকু দালাল ভূমিদস্যুরা। স্থানীয় মুরুব্বিগণদের ধারণা, পদ্মা সেতু উন্মোচিত হলে ফরিদপুর থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে অনেক প্রাইভেট কলকারখানা, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির জন্য জমির প্রয়োজন হবে। এই দালান চক্র দ্বারা ফসলি জমি নষ্ট করে জমি মালিকদের কাছ থেকে এই জমি হাতিয়ে নেয়ার জন্য এই প্রচেষ্টা। আবার সুধী মহলের কেউ কেউ বলছেন, এটা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এজেন্টদের কাজ৷ কৃষক ও ফসলি জমি নষ্ট হলে বাংলাদেশ আজীবন কামলা খাটবে এবং বিদেশ থেকে চাল, ডাল, আলু, পিয়াজ কিনে খাবে। এ ব্যাপারে উপজেলার একজন আইনজীবী জানান, The Building Construction Act 1952 এর ৩ ধারা অনুসারে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ছাড়া পুকুর খনন বা পুণঃখনন করা যাবে না। যদি কেউ এমনভাবে পুকুর বা সেচ নালা খনন করে ভুমি ও সড়কের পথ ব্যবহারে ভোগদখলে অসঙ্গতি সৃষ্টি করে তাহলে ১৫ দিনের মধ্যে খনন বা পুঃখনন বন্ধ বা ভড়াট করার আদেশ দিতে পারেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

